সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১১ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
শুরুতেই জেনে নিই উইল বা অছিয়ত কি? কোন মৃত ব্যক্তি কর্তৃক মৃত্যুর আগে তার সম্পত্তি বিলি ব্যবস্থা করার জন্য যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তা উইল। কোন মুসলমান ইসলামি আইন অনুযায়ী এরূপ কোন ইচ্ছাপত্র দিলে তাকে অছিয়ত বলে। উইল এবং অসিয়ত একমাত্র দলিল যা রেজিষ্ট্রি করার দরকার হয় না।
ধরুণ! হক সাহেব অনেক দিন যাবত রোগে ভুগছেন। তার তিন বিঘা পরিমাণ জমি আছে। তা দিয়ে তার সংসার ভালই চলতো। তার ভাইয়ের ছেলে আলতাফ তাকে দেখাশোনা করে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, সেবা-যত্ন করে। হক সাহেব আলতাফের প্রতি কৃতজ্ঞতাবসত তার সম্পত্তি আলতাফকে অসিয়ত করে দিতে চান। কিন্তু মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি অসিয়ত করতে পারবে না। তাই তার জমি থেকে এক বিঘা আলতাফকে একটি অসিয়ত দলিলের মাধ্যমে অসিয়ত করে দিলেন। কয়েক মাস পর আলতাফ হক সাহেবের স্ত্রীর গহণা চুরি করে বাজারে বিক্রি করে দিল। হক সাহেব খুব দুঃখ পেলেন। রাগে দুঃখে আলতাফকে দেয়া অসিয়ত বাতিল করার জন্য অন্য এক জনের নামে একই জমি পুনরায় অসিয়ত করে দিলেন। আলতাফের নামে আগে করে দেয়া অসিয়ত আর বহাল থাকলো না কারণ সর্বশেষ অসিয়ত বহাল হয়। অসিয়ত যে কোন সময় বাতিলও করা যায়।
মৃত্যু শয্যায় কোন ব্যক্তি উইল করার পর বেঁচে উঠলে তার খাওয়া-পরার যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে জন্য উইলকারী কর্তৃক উইল বাতিল করার বিধান আছে। একই সম্পত্তি একাধিক ব্যক্তিকে উইলকারী তার জীবদ্দশায় উইল করতে পরেন। সর্বশেষ যার নামে উইল করা হয় উইলকারীর মৃত্যুর পর সেই উইলকৃত সম্পত্তির মালিক হয়।
উইল বা অসিয়ত রেজিষ্ট্রি করার প্রয়োজন পড়ে না, রেজিস্ট্রেশন আইনের ১৮ ধারামতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস আবেদন করলে উইল সম্পর্কিত রেজিষ্ট্রার অন্তর্ভূক্তি করানো যায়। তবে মনে রাখবেন কোন হিন্দু ব্যক্তি তার সমূদয় সম্পত্তি যে কোন ব্যক্তিকে উইল করতে পারেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জেলা জজ আদালত হতে উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল প্রবেট করতে হয়। মুসলমানদের অসিয়ত প্রবেট করার দরকার হয় না। একজন মুসলমান তার সমূদয় সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি উত্তরাধিকার নয় এমন কাউকে উইল করতে পারে না। তবে উত্তরাধিকারদের মধ্যে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি উইল করতে পারে। ১৯৯৬ সালের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ মোতাবেক আইনত বৈধ। মৌখিকভাবে উইল করা হলে উইলের সাক্ষীদের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নোটিশ দিয়ে ডেকে পাঠাবেন। হাজির হলে তাদের জবানবািন্দ নিয়ে উইলের সত্যাসত্য যাচাই করে মিউটেশন করে দিতে পারবেন। উইল করা হলে উইলকারীর মৃত্যু না হলে উইল গ্রহীতার নাম কোন অবস্থাতেই মিউটেশন করে দেয়া যাবে না। উইলকারীর মৃত্যুর পরই উইল কার্যকরী হয়।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮